
নিজস্ব প্রতিবেদক : সমাজের একটি গতিশীল প্রক্রিয়া হলো শিক্ষা, যার সাথে সমাজের সব উপাদানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এই সমাজবদ্ধতার প্রাগৈতিহাসিক জীবনেও শিক্ষার অস্তিত্ব ছিল, যখন মানুষ বন্য ফলমূল, পশু শিকার করে জীবিকার সন্ধান করতো। আর আধুনিক যুগে তার পরিধি প্রতিনিয়তই বাড়ছে। বৃহৎ চেতনায় এই শিক্ষা হলো ক্রম উন্নতির পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়া, যা ব্যক্তিকে পরিবেশের সাথে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সংগতি বিধানে সহায়তা করে থাকে। আর সেখানেই আসে দক্ষতার প্রসঙ্গ এবং সেই শিক্ষার সাথে দক্ষতার সংশ্লিষ্টতার প্রশ্ন।
ব্যাপক চেতনায় শিক্ষা মূলত দক্ষতা নির্ভর। জাতীয় উন্নয়নের অপরিহার্য অনুষঙ্গ হলো দক্ষ জনশক্তি। আর জনগণকে জনশক্তিতে রূপান্তরের অন্যতম মাধ্যমে হলো কারিগরি শিক্ষা। এই শিক্ষা সাধারণ শিক্ষার বাইরে শিক্ষার্থীকে প্রযুক্তি নির্ভর, হাতে-কলমে প্রশিক্ষণদানসহ নানা আত্মকর্মসংস্থানমূলক জ্ঞানার্জনে সাহায্য করে থাকে।
দক্ষতাই আধুনিকতার পরিচায়ক। দক্ষতাবিহীন কর্ম নিষ্প্রয়োজন। আর আধুনিক বিশ্ব হলো প্রযুক্তিনির্ভর। এখানে দক্ষতা ব্যতীত উন্নয়নের চিন্তা নিরর্থক। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নবতর আবিষ্কারের ফলে বিশ্বজুড়ে উন্নয়ন কৌশল ও পদ্ধতির দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রতিনিয়তই খুবই সচেষ্টরূপে বহির্বিশ্বে বাণিজ্য, যোগাযোগ, পরিবহন ও জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে অসম প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। এদিকে বাংলাদেশ আয়তনের দিক থেকে ছোট হলেও জনসংখ্যায় বিশ্বে তার অবস্থান অষ্টম। কাজেই আমাদের এই বিশাল জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করা সম্ভব হলে দেশের উন্নয়নের পথ অনেকাংশেই সহজ হয়ে যাবে।
জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ অনুযায়ী, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার লক্ষ্যই হলো দেশ ও বিদেশের চাহিদা বিবেচনায় রেখে যথাযথ প্রযুক্তিগত জ্ঞানদানের মাধ্যমে মানসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি দ্রুত সম্প্রসারণ, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ ও শ্রমের মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে দ্রুত দক্ষ জনশক্তি তৈরি এবং জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (২০১৯) মতে, এদেশে বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি মোট ৭০৫২টি বৃত্তি ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১১০০১৭৭ জন।
বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সামাজিক সমস্যা বেকারত্বের অভিশাপ ঘুচতে কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণের জুড়ি নেই। বিবিএস-এর জরিপ অনুযায়ী দেশে কর্মক্ষম বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ। তবে আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেকারের সংখ্যা ৩ কোটি। তাছাড়াও শিক্ষিত বেকার বাড়ার পাশাপাশি মহামারি করোনার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দায় বিদেশফেরত শ্রমশক্তি এই বেকারত্বের তালিকা আরও বেশি দীর্ঘতর করছে। অথচ শুধু প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের অভাবে তারা নিজ দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিযুক্ত হতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে শিল্প কারখানা চলমান রাখার স্বার্থে দেশে প্রয়োজনীয় দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী না পাওয়া গেলেও বিদেশ থেকে বহু অর্থে দক্ষ কর্মী নিয়োজিত করতে বাধ্য হয়ে পড়ছে নিয়োগকর্তারা। আর কারিগরি শিক্ষার গুরুত্বটা মূলত এখানেই জানান দেয়। তবে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে তার গুরুত্ব অসামান্য হলেও আমাদের দেশের কারিগরি শিক্ষা নানা সমস্যায় জর্জরিত।