
নিজস্ব সংবাদদাতা : বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দেওয়া এপ্রিল মাসের ভোক্তা মূল্য সূচকের (সিপিআই) সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, এক বছর আগে ১০০ টাকার পণ্যে ৫ টাকা ৫৬ পয়সা বাড়লেও বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ২৯ পয়সা। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতির চাপে বিপর্যস্ত ক্রেতা। যেভাবে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে সেভাবে আয় বাড়ছে না। ফলে আয় ও ব্যয় মেলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে ক্রেতারা। নতুন করে বাজেটে মূল্যস্ফীতির প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। যেভাবে মূল্যস্ফীতির হার বাড়ছে তাতে ধরে রাখা কঠিন হবে বলে আশঙ্কা করেছে স্বয়ং বিবিএস।
বিবিএস মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছরই বাজেটে মূল্যস্ফীতির একটা প্রাক্কলন করা হয়। সেই হিসাবে এবারও প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ দশমিক ৫। অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে আটকে রাখার একটা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে বর্তমানে যে অবস্থা তাতে ধরে রাখা কঠিন হবে। অনেক জিনিসের দাম বাড়ছে। বর্তমানে ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ মূল্যস্ফীতির হার রেকর্ড করা হয়েছে। অমাদের কথা যে তথ্য আসবে তাই প্রকাশ করবে। তবে প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৫ শতাংশে ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ হবে বলে আমি মনে করি।
বিশ্ববাজারে যেভাবে তেলের দাম বাড়ছে তাতে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখতে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সারের দাম না বাড়িয়ে ভর্তুকি বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে। এর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। নতুন অর্থবছরে ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে ৭২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে, যা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ৫৪ শতাংশ ও সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি। এলএনজি, বিদ্যুৎ ও কৃষি খাতে ভর্তুকির পরিমাণ ৪৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকায় দাঁড়াবে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এই মুহূর্তে ভর্তুকি প্রত্যাহার করা হলে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৯ শতাংশে উন্নীত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি ধরে রাখতে সরকারের বাজেটের উদ্যোগকে প্রশংসা করেছেন অর্থনীতিবিদরা।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ও জাতিসংঘ উন্নয়ন প্রোগ্রাম বা ইউএনডিপি বাংলাদেশের কান্ট্রি ইকোনমিস্ট অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘যেভাবে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ছে তাতে সাড়ে ৫ শতাংশের মধ্যে মূল্যস্ফীতি আটকে রাখা কঠিন। তবে সরকারের কিছু উদ্যোগ নিতে হবে সেটা হলো কৃষিতে ভর্তুকি বাড়াতে হবে। সার ও ডিজেলেও ভর্তুকি বাড়াতে হবে। খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব উপকরণে ভর্তুকি দিতে হবে। ভর্তুকি বৃদ্ধি না করলে বাজেটে যে মূল্যস্ফীতির প্রাক্কলন করা হয়েছে তা ধরে রাখা কঠিন ও চ্যালেঞ্জ।’
খাদ্য ছাড়াও বাড়িভাড়া, আসবাবপত্র, গৃহস্থালি, চিকিৎসাসেবা, পরিবহন, শিক্ষা উপকরণ এবং বিবিধ সেবাখাতের মূল্যস্ফীতির হার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। খাদ্য খাত, খাদ্যবহির্ভূত খাত ও সাধারণ খাতে মূল্যস্ফীতির হার চড়া। বর্তমানে বাজারে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৯৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বিবিএসের তথ্যে দেখা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে এই পণ্যটি ১১৮ টাকা ৭৪ পয়সার মধ্যে ছিল।
বছরওয়ারি পয়েন্ট টু পয়েন্টের ভিত্তিতে ডাল, চিনি, মুড়ি, মাছ, মাংস, ব্রয়লার মুরগি, ফল, তামাক, দুগ্ধজাতীয় পণ্য এবং অন্যান্য খাদ্য সামগ্রীর দাম বেড়েছে। এক মাসের তুলনায় বেগুনে কেজিপ্রতি ১৯ টাকা ২৬ পয়সা বেড়ে ৬৭ টাকা ৩৬ পয়সা হয়েছে। এছাড়া প্রতি লিটার প্যাকেটজাত তরল দুধে ৬ টাকা বেড়ে ৮০ টাকা ২৪ পয়সা হয়েছে। তবে আলুতে ৩ টাকা কমে ২২ টাকা ১৫ পয়সা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি মিনিকেট চালে ১ টাকা বেড়ে ৬৯ টাকা ১১ পয়সা হয়েছে।
এদিকে চলতি বছরের এপ্রিল মাসেও গ্রামের তুলনায় শহরে মূল্যস্ফীতির হার কম। এপ্রিল মাসে গ্রামে যেখানে মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ, সেখানে শহরে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ। সুতরাং শহরের থেকে মূল্যস্ফীতির চাপে রয়েছে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী। এপ্রিল মাসে মজুরি সূচক ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ, অথচ সাধারণ মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ। ফলে আয়ের সঙ্গে ব্যয় মেলাতে পারছেন না ক্রেতা।