
নিজস্ব প্রতিবেদক: তিনমাস আগে পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) দায়িত্ব নেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বাংলাদেশ পুলিশের ৩১তম আইজিপি। তার চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১১ জানুয়ারি। ফলে মাত্র সাড়ে তিনমাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে ৩২তম আইজিপি পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ। আগামীতে কে হচ্ছেন দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী এ বাহিনীর প্রধান তা নিয়ে জল্পনার শেষ নেই। নতুন কোনো কর্মকর্তা এ পদে আসছেন নাকি বর্তমান আইজিপিকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে মেয়াদ বাড়ানো হবে, তা নিয়ে চলছে আলোচনা।
৩২তম আইজিপি পদে নিয়োগের দৌড়ে আলোচনায় রয়েছেন পুলিশ সদরদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মো. কামরুল আহসান। ১৯৯১ সালে বিসিএস ১২তম ব্যাচের (পুলিশ) ক্যাডারে যোগদান করেন তিনি। প্রশিক্ষণ শেষে খাগড়াছড়ি জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে পদায়ন হয় তার। এরপর চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী সার্কেলের এএসপি হন কামরুল আহসান।
পরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি, শরীয়তপুর, চট্টগ্রাম ও যশোর জেলার পুলিশ সুপার, পুলিশ সদরদপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি (সংস্থাপন) ও অ্যাডিশনাল ডিআইজি (ট্রেনিং) এবং রেলওয়ে রেঞ্জের ডিআইজি, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে গড়ে তোলা পুলিশের বিশেষায়িত শাখা অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) প্রধান হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
কামরুল আহসান জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে সিয়েরালিওন ও সুদানে ‘পুলিশ অ্যাডভাইজার’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মিশনগুলোতে দৃষ্টান্তমূলক অবদান রাখায় ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা পদক’ লাভ করেন তিনি।
কামরুল আহসান ১৯৬৬ সালে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ইমামপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে (এমবিএ) স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন এ বছর অস্থির থাকতে পারে। রাজনৈতিক সহিংসতার আশঙ্কাও করছেন বিভিন্ন মহল। রাজনীতির মাঠের সহিংসতা মোকাবিলায় প্রধান ভূমিকা রাখে পুলিশ। ঠিক এমন সময়ে পুলিশপ্রধানের দায়িত্বে কে আসছেন, তা নিয়ে হিসাব-নিকাশ চলছে। চাপের মধ্যেও দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে সক্ষম এমন কর্মকর্তাকে দায়িত্বে রাখতে চাইছে সরকার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আইজিপি হওয়ার দৌড়ে বর্তমান পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ বেশ কয়েকজন আলোচনায় রয়েছেন। তবে আইজিপি পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের নজির না থাকায় বর্তমান আইজিপির মেয়াদ বাড়ানো হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সেক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা ও দক্ষতা বিবেচনায় নতুন আইজিপি পদে আসতে পারেন পুলিশ সদরদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মো. কামরুল আহসান।
তবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে বর্তমান আইজিপির মেয়াদ বাড়ানোর সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা। যদি তাই হয়, সেক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীতে নতুন রেকর্ড গড়বেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদরদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচন ও নানা ধরনের সংকট মোকাবিলায় দক্ষতার সঙ্গে ভূমিকা রাখতে পারবেন- এমন কর্মকর্তাই নতুন আইজিপি পদে নিয়োগ পাবেন। সার্বিক পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান আইজিপির চুক্তিভিত্তিক মেয়াদ বাড়ানোসহ যোগ্য ও দক্ষ কয়েকজনের নাম প্রস্তাব করে একটি ফাইল প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সদরদপ্তর সূত্র জানায়, আইজিপি পদে সুনির্দিষ্ট কোনো মেয়াদকাল নেই। সরকারি চাকরির বিধি অনুযায়ী ৫৯ বছর বয়স হলে অবসরে যান কর্মকর্তারা। আগামী ১১ জানুয়ারি সরকারি চাকরির বিধি অনুযায়ী ৫৯ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ায় বর্তমান আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের চাকরির মেয়াদ শেষ হবে। বিধি অনুযায়ী মাত্র তিন মাস ১১ দিন আইজিপি পদে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
তবে বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ চারবছর সময় ধরে আইজিপি ছিলেন হাসান মাহমুদ খন্দকার। ২০১০ সালের ৩১ আগস্ট থেকে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন তিনি।